সিউইড
বলতে সুমুদ্র-আগাছা বোঝেন অনেকে। তাঁদের
যিদ সিউইডে তৈরি খাবারের
কথা বলা হয় তা
হলে তাঁরা যে নাক
সিটকাবেন এতে আবাক হওয়ার
কিছু নেই। গড়পড়তা
বাঙালি-মানুষ অনেকটা ওরকমেরই। গড়পড়তা
বলছি কেন? ঝানু ঝানু
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, রন্ধন বিশেষজ্ঞদের লেখা
বা কথায় এ শব্দ-বন্ধটির অনুপস্থিতিই বলে দেয়-তাঁরাও
অজ্ঞ এ ব্যাপারে।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়
নামি-দামি খাবারের রেসিপি
দিতে গিয়ে তাঁরা বেল-পেপার, ক্যাপসিকাম ইত্যাদই
মন ভোলানো উপচারের ফিরিস্তি
দিয়ে থাকেন, ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ
করেন না সিউইডের নাম। অথচ
এই সিউইড সংযোজন যে
কোনো ধরনের খাবারকে সুস্বাদু
তো বটেই-এর পুষ্টিগু
ণও বাড়িয়ে দিতে পারে
অনেক। অজ্ঞতাই
যে এই নির্লিপ্ততার কারণ
তা আর বলার অপেক্ষা
রাখে না। সমুদ্রসীমা
জয় করা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে
এক বিরাট ভূমিকা রাখতে
পারে সিউইড তথা সমু
দ্রশৈবাল। খাদ্য,
প্রসাধন ও ডেকোরেশন- এই
তিন আঙ্গিকে এর ব্যবহার বহির্বিশ্বে
বেশ মর্যাদার বলে বিবেচিত।
এক সময় আমাদের দেশের
সেন্টমাটিন, টেকনাফ, কক্সবাজার ইত্যাদি উপকূলীয় এলাকার মানুষ জঞ্জাল
মনে করে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের
এমনি-এমনি বা নামমাত্র
মূল্যে দিয়ে দিত।
বলার অপেক্ষা রাখে না সিউইড
পণ্য মিয়ানমারের অন্যতম একটি রফতানি
পণ্য। অথচ
বাংলাদেশের জলসীমার সিউইড মানের দিক দিয়ে
বিশ্বের এক নম্বর।
বাংলাদেশে সিউইডের একমাত্র উদ্যোক্তা জাহানারা ইসলাম এটি নিয়ে
কাজ শুরু করেছিলেন শখের
বশেই। এর
গুণপনায় মজে গিয়ে তিনি
এখন নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেন- ‘এই সিউইড
পণ্য দিয়েই আমি বাংলাদেশের
সাগরজয়কে সার্থক করে তুলব।’ প্রসাধন,
খা দ্য ও ডেকোরেশন-
তিনভাবেই তিনি এ পণ্য
বাজারজাত করছেন। তিনি
সমুদ্রের অন্ধকার অতলে ডুব দিয়ে
দেশের জন্য খুলে দিয়েছেন
রত্নভাণ্ডারের দ্বার। একটি
গবেষণা গ্রন্থ রচনার জন্য
সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা খুঁজতে গিয়ে কক্সবাজারে
সন্ধান পেয়েছিলাম মিসেস জাহানারা ইসলাম
এর। কথা
প্রসঙ্গে জানালেন-যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী তাঁর আত্মীস্বজন এবং
পরিচিতজনদের ভেতর ক্যান্সার আক্রান্তদের
ডাক্তার সিউইড খাওয়ার পরামর্শ
দিলে তারা বাংলাদেশে এসে তাঁর কাছ
থেকে এগুলো সংগ্রহ করতেন। তাঁরাই
ছিলেন তাঁর প্রথম দিকের ক্রেতা। এখন
অবশ্য বেশ কয়েকটি পাঁচ-তারা হোটেলেও সরবরাহ
করছেন। জানালেন,
‘এখন আমরা খাদ্য, প্রসাধনী,
ডেকোরেশন, ওষুধ, পশুখা দ্য,
জৈব সার (কৃষিতে ব্যবহার্য)
ও জ্বালানি হিসেবে সিউইড বাজারজাত
করছি। খাদ্যের
ভেতরে আমাদের উদ্ভাবিত ডায়াবেটিস
ডায়েটটি খুব সমাদ্রিত হয়েছে
এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি
ছাড়াও পিৎজা, সমুসা, পাকোড়া,
স্যুপ, সালাদ , ডেজার্ট , কেক, বান, সিঙ্গাড়া,
শাক ইত্যাদিতে সিউইড ব্যবহৃত হচ্ছে।’ সামুদ্রিক
খাবারের প্রতি সাধারণ মানুষের
নাক সিটকানির একটা প্রবণতা আছে
এদেশের মানুষের। প্রচার
নেই বলে দেশের কেউ
জানেই না কী সম্পদ
তারা হাতছাড়া করছে স্রেফ অজ্ঞতার
কারণে! বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি
কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম এর
মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে
চলেছেন। সরকার
এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা কি এগিয়ে আসবেন
এই গুপ্তধন আহরণে? মূলত Blue
Sea Economy বা নীল
সমুদ্র অর্থনীতি’র অন্যতম সম্পদ
হতে পারে আলোচ্য সিউইট
তথা সমুদ্র শৈবাল।
User Comments: