বিভিন্ন
সময় মাছ নানা রোগে
আক্রান্ত হয়। নানা
কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ জলাশয়ে
চাষ করা মাছে রোগাক্রমণ
বেশি হয়ে থাকে।
তাই পুকুর-দীঘির মাছ
প্রায়ই নানা রোগের কবলে
পড়তে দেখা যায়।
পুকুর-দীঘিতে যেসব রোগে
মাছ আক্রান্ত হতে পারে,
এ ধরনের কয়েকটি সম্ভাব্য
রোগ ও তার প্রতিকার
সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো।
মাছের ক্ষত
রোগ
: এ রোগে সাধারণত শোল,
গজার, টাকি, পুঁটি, বাইন,
কৈ, মেনি, মৃগেল, কার্পিও
এবং পুকুরতলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ আক্রান্ত হয়ে
থাকে। আক্রান্ত
মাছের গায়ে ক্ষত বা
ঘা-জনিত লাল দাগ
দেখা যায়। এই
দাগের আকৃতি ক্রমেই বৃদ্ধি
পেতে থাকবে। ঘায়ের
স্থানে চাপ দিলে কখনও
কখনও পুঁজও বের হতে
পারে। ঘা
মাছের লেজের গোড়া, পিঠ
ও মুখের দিকেই বেশি
হয়ে থাকে।
করণীয় : রোগাক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে
তাত্ক্ষণিকভাবে তুলে ফেলতে হবে। ১০
লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম
লবণ গুলে লবণমিশ্রিত পানিতে
রোগাক্রান্ত মাছ পাঁচ থেকে
দশ মিনিট ডুবিয়ে রাখার
পর পুকুরে ছেড়ে দিতে
হবে। ক্ষতরোগে
আক্রমণের আগেই প্রতি বছর
আশ্বিন মাসের শেষে কিংবা
কার্তিক মাসের প্রথম দিকে
পুকুরে শতাংশপ্রতি ১ কেজি হারে
পাথুরে চুন ও ১
কেজি হারে লবণ প্রয়োগ
করা হলে সাধারণত শীত
মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল
থেকে মাছ মুক্ত থাকে। বিশেষজ্ঞ
সূত্র থেকে জানা যায়,
এ রোগ নিরাময়ের জন্য
০.০১ পিপিএম চুন
ও ০.০১ পিপিএম
লবণ অথবা ৭-৮
ফুট গভীরতায় প্রতি শতাংশ জলাশয়ে
১ কেজি হারে পাথুরে
চুন ও ১ কেজি
হারে লবণ প্রয়োগ করা
হলে আক্রান্ত মাছ দুই সপ্তাহের
মধ্যেই আরোগ্য লাভ করে।
মাছের পেট
ফোলা
রোগ
: এ রোগে সাধারণত রুইজাতীয়
মাছ, শিং-মাগুর ও
পাঙ্গাশ মাছ আক্রান্ত হয়ে
থাকে। রোগাক্রান্ত
মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে
হয়ে যায়। পেটে
পানি জমার কারণে পেট
ফুলে যায়। মাছ
ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। বেশিরভাগ
সময়ই পানির ওপর ভেসে
ওঠে এবং খাবি খায়। আক্রান্ত
মাছ অতি দ্রুত মৃত্যুর
মুখোমুখি হয়ে থাকে।
মত্স্যবিজ্ঞানীদের মতে, অ্যারোমোনাডস জাতীয়
ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ।
করণীয় : প্রথমত, খালি সিরিঞ্জ দিয়ে
মাছের পেটের পানি বের
করে নিতে হবে।
অতঃপর প্রতিকেজি মাছের জন্য ২৫
মিলিগ্রাম হারে ক্লোরেম ফেনিকল
ইনজেকশন দিতে হবে অথবা
প্রতিকেজি সম্পূরক খাবারের সঙ্গে ২০০ মিলিগ্রাম
ক্লোরেম ফেনিকল পাউডার মিশিয়ে
মাছকে খাওয়াতে হবে। প্রতিকার
হিসেবে প্রতি শতাংশ জলাশয়ে
১ কেজি হারে পাথুরে
চুন প্রয়োগ করতে হবে।
এক্ষেত্রে মাছের খাদ্যের সঙ্গে
ফিশমিল ব্যবহার করা একান্তই অপরিহার্য। এছাড়া
পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উত্পাদনসহ মাছকে
নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদানের
বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
পাখনা অথবা
লেজপচা
রোগ
: এ রোগে সাধারণত রুইজাতীয়
মাছ, শিং-মাগুর ও
পাঙ্গাশ মাছ আক্রান্ত হয়ে
থাকে। এ
রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে পিঠের
পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য
পাখনাও আক্রান্ত হয়। কোনো
কোনো মত্স্যবিজ্ঞানীর অভিমত, অ্যারোমোনাডস ও
মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের
সংক্রমণ ঘটে। পানির
ক্ষার স্বল্পতা ও পিএইচ ঘাটতি
দেখা দিলেও এ রোগের
উত্পত্তি হতে পারে।
করণীয় : ০.৫ পিপিএম
পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে
৩ থেকে ৫ মিনিট
ডুবিয়ে রাখতে হবে।
পুকুরে সাময়িকভাবে সার প্রয়োগ বন্ধ
রাখতে হবে। এছাড়া
রোগ-জীবাণু ধ্বংসের পর
মজুতকৃত মাছের সংখ্যা কমিয়ে
ফেলতে হবে। এ
অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১
কেজি হারে পাথুরে চুন
প্রয়োগ করা অতি জরুরি। মাছের
উকুন রোগ : এ রোগে
সাধারণত রুই মাছ, কখনও
কখনও কাতল মাছও আক্রান্ত
হতে পারে। গ্রীষ্মকালে
এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা
যায়। এ
রোগে মাছের সারাদেহে উকুন
ছড়িয়ে দেহের রস শোষণ
করে মাছকে ক্ষতবিক্ষত করে
দেয়। এতে
মাছ ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মারা
যায়।
পুষ্টির অভাবজনিত
রোগ
: এ রোগে পুকুরে চাষযোগ্য
যে কোনো মাছই আক্রান্ত
হতে পারে। ভিটামিন
এ.ডি এবং কে-এর অভাবে মাছ
অন্ধত্ব এবং হাড় বাঁকা
রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
মাছের খাবারে আমিষের ঘাটতি
দেখা দিলেও মাছের স্বাভাবিক
বর্ধনপ্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। অচিরেই
মাছ নানা রোগের কবলে
পড়ে। এসব
রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সঙ্গে
প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণ
মিশিয়ে খাওয়ানো হলে যথাশিগগিরই মাছের
শারীরিক সুস্থতা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
করণীয় : সুস্থ-সবল মাছ
উত্পাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে সম্পূরক খাদ্য
প্রদান অত্যাবশ্যক। মাছের
রোগ হওয়ার পর চিকিত্সার
পরিবর্তে মাছের রোগ যাতে
না হয়, সে ব্যবস্থা
গ্রহণ করাই উত্তম।
কেননা, মাছ চাষের ক্ষেত্রে
মাছের রোগ একটি বড়
সমস্যা। সর্বোপরি
সঠিক ব্যবস্থাপনা, যথাযথ নিয়ম পদ্ধতি
তথা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের
মাধ্যমে মাছ চাষ করা
হলে চাষকৃত পুকুরে মাছের
রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।
User Comments: