কক্সবাজারসহ
দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল
কোরাল বা ভেটকি চাষের
জন্য খুব উপযুক্ত।
ঘেরে ভেটকির চাষ করে
এ অঞ্চলের মানুষ তাদের অর্থনীতির
উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার কিছু ঘেরে
চিংড়ি ও কাঁকড়ার পাশাপাশি
ভেটকির চাষ হলেও সম্ভাবনাময়
এ খাতের জন্য সবচেয়ে
বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোনা
সংকট। তবে
এ নিয়ে চাষীদের দূর্ভাবনার
অবসান ঘটাতে দেশে প্রথমবারের
মত কক্সবাজারে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ভেটকি
পোনা হ্যাচারি। এই
হ্যাচারি স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী
কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস
বিশ্ববিদ্যালয়কে (সিভাসু) ৬ কোটি টাকার
একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। মালয়েশিয়ার
বিজ্ঞানীদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায়
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরস্থ সিভাসু ক্যাম্পাসে এ
হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে।
এ
বিষয়ে বাংলাদেশ সফররত ভেটকি প্রজনন
বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী
গত বৃহস্পতিবার এ হ্যাচারির জন্য
নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে
ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন- ইউনিভার্সিটি
অব মালয়েশিয়া তেরেঙ্গানো (ইউএমটি) এর ইন্সটিটিউট অব
ট্রপিক্যাল একোয়া কালচার বিভাগের
পরিচালক প্রফেসর ড. আবুল মুনাফি
বিন আমবক বোলং ও
স্কুল অব ফিশারিজ এন্ড
একোয়া কালচার সাইন্সেস অনুষদের
ডেপুটি ডিন প্রফেসর ড.
মোহাম্মদ হানাফী বিন ইদ্রিস। বৃহস্পতিবার
তারা কক্সবাজারে পৌঁছে শহরতলীর খুরুশকুল
ও চৌফলদন্ডির বিভিন্ন মৎস্য খামার পরিদর্শন
করেন। এসময়
তারা প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণ পদক পুরস্কারপ্রাপ্ত
অংচিনের কাঁকড়া খামারও পরিদর্শন
করেন। পরে
তারা শহরতলীর দরিয়ানগরস্থ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস
বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) কক্সবাজার ক্যাম্পাসে ভেটকি পোনা হ্যাচারি
স্থাপনের উপযুক্ততা পরীক্ষার পর সিভাসু’র
মাৎস্য বিজ্ঞানীদের সাথে সাথে এক
বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে সিভাসুর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন-
মাৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.
মোহাম্মদ নুরুল আবছার খান,
একই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান যথাক্রমে ড.
শেখ আহমদ আল নাহিদ
ও ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বৈঠক
শেষে মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞগণ এ প্রতিবেদককে বলেন-
কক্সবাজারসহ সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর লবণাক্ত পানির ঘেরে ভেটকি
মাছের চাষ করে মৎস্য
চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ
বিষয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা
যৌথভাবে গবেষণা ও তথ্য
বিনিময় করছে। গত
বছর সম্পাদিত এ সংক্রান্ত একটি
চুক্তির আওতায় সিভাসুর মৎস্য
বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
গত প্রায় ৬ মাস
আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে
প্রায় দেড়মাস মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা
ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছে।
একইভাবে কোর্সের অংশ হিসাবে তেরেঙ্গানো
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দলও আগামী
জুলাই মাসে ৪০ দিনের
জন্য বাংলাদেশে আসবে। শিক্ষা
ও গবেষণার জন্য তারা ১০
দিন কক্সবাজারেও অবস্থান করবে।
চট্টগ্রাম
ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস
বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতমবুদ্ধ দাশ
বলেন- কক্সবাজারে ভেটকি পোনা হ্যাচারি
নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী
কমিশনের ৬ কোটি টাকার
একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুত
নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ
নেওয়া হচ্ছে। এরই
অংশ হিসাবে তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভেটকি প্রজনন বিশেষজ্ঞরা কারিগরি
ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন।
তিনি
জানান- দেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের
ফসল ঘরে তুলতে বর্তমান
সরকার ব্লু-ইকোনমি বা
সমুদ্র সম্পর্কিত অর্থনীতি জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করছে।
কৃত্রিম উপায়ে দেশে ভেটকি
পোনা উৎপাদনের উদ্যোগ তারই একটি
অংশ।
জানা যায়, দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ভেটকি ও নরম খোলসের কাঁকড়া চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও একমাত্র পোনা সংকটের কারণে এসব চাষের বিস্তার ঘটানো যাচ্ছেনা। বর্তমানে দেশে কৃত্রিম উপায়ে বাগদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন হলেও ভেটকি ও কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের কোন হ্যাচারি নেই। ভেটকি মাছের প্রজনন বিষয়ে দেশে বিশেষজ্ঞেরও অভাব রয়েছে। অথচ এ চাষে অনেক এগিয়ে গেছে বন্ধু প্রতীম দেশ মালয়েশিয়া। আর মালয়েশিয়ার এ সাফল্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলেও মৎস্য বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞানীরা
User Comments: