ক্ষাৎকার: নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
দেশের
জনগণের মাছের চাহিদা মেটাতে
আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।
এখন বিদেশের বাজার দখলের লক্ষ্য
সামনে রেখে মাছের উৎপাদন
বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চাহিদা
বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে
কাঁকড়া, কুঁচে, ভেটকি, দাঁতনে,
টেংরার মতো নদীর মাছের
পোনা হ্যাচারিতে উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। আরেক
সম্ভাবনার ক্ষেত্র বঙ্গোপসাগর। আগামী
দিনে এসব মাছ রপ্তানি
করে জাতীয় অর্থনীতিতে বড়
ধরনের অবদান রাখা সম্ভব
হবে।
রাজধানীর
মন্ত্রীপাড়ার ফ্ল্যাটে ৮ জানুয়ারি কালের
কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে
এমন লক্ষ্য ও প্রত্যাশা
ব্যক্ত করেন মৎস্য ও
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। একই
মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি
পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বে আসীন হয়েছেন এই
সাবেক শিক্ষক। দীর্ঘ
আলাপকালে তিনি মৎস্য ও
প্রাণী খাতের পাশাপাশি সরকারের
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, আগামী নির্বাচন, রাজনীতি
এবং নিজের নির্বাচনী এলাকার
সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা
তুলে ধরেন। একই
সঙ্গে তিনি নিজ রাজনৈতিক
অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে প্রত্যয় ব্যক্ত
করেন।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্যান্য দলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবিদ বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে না এসে ধ্বংসাত্মক কাজ করল। তাদের সঙ্গে আবার কিসের সমঝোতা? আর যেখানে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সেখানে সমঝোতা হয় না।
সংবিধান
অনুযায়ী নির্বাচন হবে, রাজনৈতিক দলগুলো
তাতে অংশ নেবে—এটাই
স্বাভাবিক। তিনি
আরো বলেন, এখন ইন্টারনেটের
যুগ। মানুষের
হাতে হাতে ক্যামেরা, মোবাইল,
ইন্টারনেট। ভোটে
অনিয়ম হলে সেটা চাপা
থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী
জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি
কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে
গুরুভার অর্পণ করেছেন তা
যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট থাকব। গত
চার বছর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব
পালনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মৎস্য
ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের ধারাকে আরো গতিশীল
করব। পূর্ণ
মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নতুন কিছু
পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব
দিচ্ছি। আমি
মাছের এলাকার মানুষ।
দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীও
বিষয়টি আমাকে স্মরণ করিয়ে
দিয়েছেন।
নারায়ণ
চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর
সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে পাওয়া গভীর
সমুদ্রসীমায় কী পরিমাণ সম্পদ
রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের
স্বচ্ছ ধারণা নেই।
আবার গভীর সমুদ্র থেকেও
মাছ ধরতে পারি না। এই
সম্পদের জরিপ করার জন্য
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিঙ্গাপুর থেকে একটি বিশেষ
ধরনের জাহাজ আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে
সেটি জরিপের কাজ শুরু
করেছে। জরিপ
প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী
পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়
এ পর্যন্ত ১৬২ প্রজাতির মাছের
সন্ধান মিলেছে। এর
মধ্যে চিংড়ি রয়েছে ১৬
প্রজাতির। এগুলোর
মজুদ জানার পর সেই
অনুপাতে আহরণের পদক্ষেপ নিতে
হবে। ইলিশের
মতো এসব মাছের ক্ষেত্রেও
ডিম ছাড়ার সময়ের জন্য
বিশেষ নিয়ম-নীতি তৈরি
করতে হবে। নইলে
মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে
যাবে।
বাংলাদেশের
সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশাল
সমুদ্রসীমায় অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ রোধ করাটা শতভাগ
নিশ্চিত করা যাবে না। তবে
এখন নৌবাহিনী অনেক তত্পর।
স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমেও
নজরদারির সুযোগ রয়েছে।
ফলে এমন ঘটনা ঘটলে
সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া
সম্ভব।
নারায়ণ
চন্দ্র বলেন, মাছের মতো
মাংসের চাহিদা পূরণেও আমরা
স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির চাষ দিন
দিন বাড়ছে। এ
বছর মাংস উৎপাদিত হয়েছে
৭১ লাখ টন।
মাংসের উৎপাদন বাড়াতে উন্নত
জাতের গরু চাষের উদ্যোগ
নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ
করে উন্নত জাতের মুরা
মহিষ চাষের উদ্যোগ নেওয়া
হয়েছে। এই
জাতের মহিষ সাধারণত ভারত
ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়।
এই জাতের মহিষে মাংস
বেশি হয়, দুধও বেশি
দেয়। এর
মাধ্যমে আগামী দুই বছরে
দেশ দুধের চাহিদা পূরণে
সক্ষম হবে। এর
বাইরে উন্নত জাতের ভেড়া
চাষেও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
দেশীয় জাতের মুরগি পালনে
বিশেষ করে গ্রামের গৃহবধূদের
প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
টিকা, ওষুধের মাধ্যমে এসব
পশু-পাখির রোগবালাই নিয়ন্ত্রণও
সম্ভব হচ্ছে।
এক
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,
দেশীয় পোল্ট্রি খাতের উন্নয়নে বাধা
সৃষ্টি করতে একটি সিন্ডিকেট
সক্রিয়। তারা
নানা সময়ে অযথা দাম
বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি
করে। পোল্ট্রি
মাংস ও বাচ্চার দাম
কমানোসহ এই খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের
নির্দেশ দিয়েছি। প্রত্যাশা
করি, দ্রুতই ভালো ফল
পাওয়া যাবে।
আওয়ামী
লীগের স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দল
প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এলাকায় উঠতি
নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা নেতিবাচক
মনোভাব লক্ষ করা যায়। আমরা
৫০ বছর রাজনীতি করে
যেটুকু অর্জন করেছি তারা
তা এক বছরেই পেতে
চায়। দ্বন্দ্বটা
তৈরি হয় সেখানে।
মানুষের কাছে না গিয়ে,
তাদের সুখ-দুঃখ না
বুঝে কেবল তাদের ভোট
পেতে চায়। এগুলো
বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। সেই
ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষের
কাছে যেতে হবে।
দীর্ঘ
১৮ বছর পর খুলনা
অঞ্চলের মানুষ পূর্ণ মন্ত্রী
পেল উল্লেখ করে নারায়ণ
চন্দ্র চন্দ বলেন, এটা
খুলনার জন্য দুর্ভাগ্য।
তবে সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের
মধ্যে ঘাটতি রয়েছে।
পরীক্ষিত যোগ্য নেতৃত্বও তো
লাগবে। আজ
আমি যেখানে আছি সেটা
সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা,
দলীয় আস্থা আর জনগণের
অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য। এ
জন্য প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এলাকাবাসীর কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা)
আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ
চন্দ্র চন্দ ১৯৪৫ সালের
১২ মার্চ খুলনার ডুমুরিয়া
উপজেলার উলা গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। তিনি
ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ছয়বারের
নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০০
সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত
উপনির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ
সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১
সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও ২০০৮
সালের নির্বাচনে জয়ী হন।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর
আগে ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৬৭
সালে তিনি আওয়ামী লীগের
রাজনীতিতে যুক্ত হন।
পেশা হিসেবে বেছে নেন
শিক্ষকতা। ২০০৫
সালের ১১ মার্চ তিনি
অবসরে যান। ব্যক্তিগত
জীবনে তিনি তিন ছেলে
ও এক মেয়ের বাবা। তাঁর
স্ত্রী ঊষা রানী চন্দও
পেশায় একজন শিক্ষক।
User Comments: